শেখ কামালের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, শিল্প ও সংস্কৃতি অনুরাগী এবং ফুটবল, হকি, ক্রিকেটসহ বাংলাদেশের খেলাধুলার অঙ্গনে যার বিশেষ অবদান রয়েছে সেই শেখ কামালকে নিয়ে অপপ্রচারের শেষ নেই। ৭১ সালে বাংলাদেশের প্রথম ওয়ার কোর্সে ট্রেনিং নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে বিরোচিত ভূমিকা পালন করেন শেখ কামাল। মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল ওসমানীর এডিসি ছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতার পর সেনাবাহিনী থেকে অব্যহতি নিয়ে ফিরে যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। মৃত্যুর কিছুদিন আগে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেছিলেন। তাকে নিয়ে পাকিস্তানের প্রেতাত্মারা যে অপপ্রচার চালায় তার অন্যতম ব্যাংক ডাকাতি।
শেখ কামাল ছায়ানটে সেতার শিখতেন আবার পপ সঙ্গীতও শিখতেন; লোক নাট্যদলে নাটক করতেন অন্যদিকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাও ছিলেন। তার প্রতিষ্ঠিত আবাহনী ক্রীড়াচক্র উপমহাদেশে এক সাফল্যের নাম। সহজ সরল জীবন যাপনের কারণে তার বন্ধুর সংখ্যা ছিল অগণিত যাদের অনেকেই বাংলাদেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রের সফল ব্যক্তিত্ব। তাই তার বন্ধু বা সহযোগীরা খারাপ এমন অভিযোগ শত্রুরাও কখনো করেনি।

প্রসঙ্গ ব্যাংক ডাকাতিঃ

ফকিরাপুলে অবস্থানরত আবাহনী ক্রীড়াচক্রের দুজন খেলোয়াড় শেখ কামালকে অবগত করেন যে, জাসদের গণবাহিনী বাংলাদেশ ব্যাংক ডাকাতি করবে। এ তথ্য জানার পর তিনি ঢাকার তৎকালীন পুলিশ সুপার মাহবুব উদ্দিন বীর বিক্রমকে (সাবেক সাংসদ যিনি এসপি মাহবুব নামে পরিচিত) জানান। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দেশের জন্য যিনি যুদ্ধ করেছেন তিনি এ ধরণের ঘটনা প্রতিরোধ করতে পিছু হটবেন না এটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। তিনি তার বন্ধুদের নিয়ে মতিঝিল ছুটে যান দুষ্কৃতকারীদের ধরার জন্য। এদিকে এসপি মাহবুব পুলিশ বাহিনী নিয়ে সন্ত্রাসীদের ধাওয়া করে এবং এতে গণবাহিনীর দুজন পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়। এ অভিযানে শেখ কামাল সন্ত্রাসীদের ধরার জন্য তার জিপ থেকে লাফ দিলে রাস্তায় পড়ে যান এবং সামান্য আহত হন। শেখ কামাল ও এসপি মাহবুবের নেতৃত্বে ব্যাংক ডাকাতির অপচেষ্টা রুখে দেয়ার সংবাদ পরের দিন ডেইলী মর্নিং নিউজ এ প্রকাশিত হয়েছিল। ঘটনার পর পাকিস্তান ভাঙ্গার শোকে শোকাহত স্বাধীনতা বিরোধী ও বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র কায়েমে আ.লীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত গোষ্ঠি কুৎসা রটনা শুরু করে যা ৭৫-এর পর প্রকৃত ঘটনা আড়াল করে স্থান পায়।
এ ঘটনায় এসপি মাহবুব ছাড়া শেখ কামালের সাথে যারা গিয়েছিলেন তাদের মধ্যে বিএনপি নেতা ইকবাল হাসান টুকু এবং জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ অন্যতম। যে পত্রিকায় সংবাদটি প্রকাশ হয়েছিল সেই মর্নিং নিউজের সম্পাদক ছিলেন সদ্য প্রয়াত সাংবাদিক এবিএম মুসা। তিনি মৃত্যুর আগে আওয়ামী লীগের অনেক সমালোচনা করেছেন কিন্তু কখনো শেখ কামালের ব্যাংক ডাকাতির অভিযোগ করেন নি।

ডালিমের স্ত্রী অপহরণঃ.
মেজর ডালিমের স্ত্রী অপহরণের কথা অপপ্রচার করা হয় অথচ তার লেখা “যা দেখেছি, যা বুঝেছি যা করেছি” বইয়ে লেখা আছে রেডক্রসের সভাপতি গাজী গোলাম মোস্তফার ছেলেদের সাথে ডালিমের স্ত্রী নিম্মির ভুল বোঝাবুঝি সামরিক বেসামরিক বহু ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু মীমাংসা করে দেন। বঙ্গবন্ধুর হত্যার সাথে জড়িত থাকায় ডালিমের স্ত্রী তাকে থুথু নিক্ষেপ করেছিল এবং ডালিম তাকে পাগল সাব্যস্ত করে।
শেখ কামালের সাদামাটা জীবন নিয়ে নাট্য ব্যক্তিত্ব ডলি জহুর স্মৃতিচারণ করে বলেছিলেন, “১৯৭৩-৭৪ সালে ঢাকা শহরে রাত ১০ টা মানেই অনেক রাত। রাস্তা একেবারেই ফাঁকা। কামাল ভাই আমাকে ১১টা-১২টার দিকে বাসায় পৌছে দিতেন। প্রেসিডেণ্টের ছেলে হয়েও তার কাছে সবসময় টাকা থাকত না। এ নিয়ে অনেক ক্ষ্যাপাতাম। শুধু আমি না ক্যাম্পাসেও তার বন্ধুরা তাকে এই জন্য ক্ষ্যাপাত। যেদিন কামাল ভাইয়ের কাছে টাকা থাকত না সেদিন রাতে হেঁটে যেতাম। যেদিন টাকা থাকত সেদিন যেতাম রিকশায়। কত রাতের পরে রাত উনার সাথে আমি একা বাসায় ফিরেছি অথচ একবারের জন্যও আমি তাকে আমার দিকে বাজে দৃষ্টিতে তাকাতে দেখিনি।

” বিএনপি-জামাত অভিযোগ করে থাকে –
স্বাধীনতার পর ভারত থেকে ইচ্ছানুসারে টাকা ছাপিয়ে আনা হয়। যদি টাকা ছাপিয়ে আনা যায় তাহলে ব্যাংক ডাকাতি কেন? দেশের স্থপতি, প্রধানমন্ত্রী বা যার কথাই আইন তার ছেলের কি ব্যাংক ডাকাতি করার প্রয়োজন আছে? দেশের শীর্ষ ধনী হওয়ার জন্য তারেক রহমান বা কোকোর কি ব্যাংক ডাকাতি করতে হয়েছে? তারা কি তাদের অর্থ বা সম্পদ লুকাতে পেরেছে? বঙ্গবন্ধু হতাকাণ্ডের পর কেউ কি দেখাতে পেরেছে বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের কোন ব্যাংক একাউন্ট বা কোন সম্পদ? সেনাবাহিনীর জব্দকৃত তালিকায় বঙ্গবন্ধুর একাউন্টে মাত্র ১২ হাজার টাকা ছাড়া কারও নামে কোন সম্পদ পাওয়া যায় নি। জীবন দেয়ার পরও জাতির পিতার পরিবার নিয়ে অপপ্রচার কি এখনো শেষ হবে না!

আবদুল্লাহ হারুন জুয়েল

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।